ছবি সংগীত
ডায়াবেটিসকে বলা হয় মাদার অব ডিজিস। অর্থাৎ সব রোগের মা। এই রোগটি একবার সঙ্গী হলে আর বিদায় নেয় না। কোনোরকমে নিয়ন্ত্রণ করা যায় কেবল। ডায়াবেটিস বলতে মূলত রক্তে সুগার বা শর্করার মাত্রার আধিক্য বোঝায়। অনেকে ভাবেন, যারা মিষ্টি বেশি খায় তাদেরই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বিগত কয়েকবছরে সেই ভুল ধারণা ভেঙেছে বেশিরভাগেরই।
বর্তমানে অসংখ্য মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। কেবল বয়স্করা নয়, ব্লাড সুগারের বাড়তি পরিমাণ ধরা পড়ছে শিশুদের দেহেও। তেমন একটা মিষ্টি খান না এমন অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন ডায়াবেটিসে। রক্ষা পাচ্ছেন না হাঁটাহাঁটি করেন, ব্যায়াম করেন এমন ব্যক্তিরাও।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৫০ শতাংশ মানুষ জানেনই না, তাদের শরীরে বাসা বেঁধেছে এই রোগ। অসংখ্য মানুষ প্রিডায়াবেটিকে ভুগছেন। অর্থাৎ ভবিষ্যতে তাদের রোগটি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং আগাম সতকর্তা মেনে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।
কেন বাড়ছে ডায়াবেটিস?
গবেষণালব্ধ তথ্যে বলা হচ্ছে, মানুষের জীবনযাপনের সঙ্গে ভীষণভাবেই জড়িয়ে গিয়েছে আলট্রা প্রসেসড ফুড বা অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার। যাতে ‘এজিইজ’ বা অ্যাডভান্সড গ্লাইকেশন এন্ড প্রডাক্টস ভর্তি থাকে। এজিইজ থাকা এসব খাবার সরাসরি অগ্ন্যাশয়ের ক্ষতি করে। বাড়িয়ে দেয় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও।
কেন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী বাড়ছে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চেষ্টা করেন চিকিৎসকরা। এজন্য তারা দায়ী করছেন খাদ্যাভ্যাস আর জীবনযাপনকেই। গবেষণায় যুক্ত থাকা চিকিৎসকরা বলছেন, গত কয়েক বছরে মানুষের খাদ্যাভ্যাসে নানারকম পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে তারা অনেক বেশি শর্করা, স্নেহ পদার্থ, নোনতা খাবার, মিষ্টি খাবার এবং প্রাণীজ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাচ্ছেন। এর পাশাপাশি ব্যস্ত জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় শরীরচর্চাও করছেন না। আর এগুলোই ডায়াবেটিসের হার বৃদ্ধির কারণ।
সম্প্রতি ডায়াবেটিস বৃদ্ধির কারণ খুঁজে বের করতে একটি যৌথ গবেষণা চালিয়েছিল আইসিএমআর এবং মাদ্রাজ ডায়াবেটিস রিসার্চ ফাউন্ডেশন। এতে উঠে আসা একটি তথ্য বলছে, চিপস-জাতীয় ভাজাভুজি খাবার, কেক-কুকিজ এবং মেয়োনিজ ভারতীয়দের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ। আমাদের দেশের জন্যও একই কারণ প্রযোজ্য।
খাবারে ‘এজিইজ’ কম রাখার উপায়
আমাদের দৈনন্দিন খাবারে ‘এজিইজ’-এর মাত্রা বেড়েই চলেছে। এটি ডায়াবেটিসের একটা বড় কারণ। চাইলেই কিন্তু এজিইজ এড়ানো যায়। যেকোনো রকমের তেলে ভাজা, রোস্ট করা বা গ্রিল করা খাবার থেকে দূরে থাকুন। খাবার সিদ্ধ করার পরে ভাজলে বা রোস্ট করলে বা গ্রিল করলে এজিইজ তৈরি হয়। অতিরিক্ত তেল খাবেন না। ঘি এড়িয়ে চলুন। এর বদলে বেশি ফল, শাক-সবজি, দানাশস্য বা ডাল খান। শুকনো ফল, রোস্ট করা আখরোট, ভাজা মাংস বা প্রক্রিয়াজাত মাংস এড়িয়ে চলুন।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস আর নিয়মিত শরিরচর্চাই পারে রক্তের ব্লাড সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে।